❮ Back (click to back)
শুভ্র (এক সাধারন ছেলের গল্প)
Tuesday, August 11, 2015 11:36:35
Written by : Rafiur
0
(0 Rated out of 2,005 Read)

শুভ্র ছোট বেলা থেকেই খুবই সাধারন এবং পড়াশোনায় মনোযোগী একটা ছেলে ।সবসময় ক্লাসে প্রথম অথবা দ্বিতীয় হত ।সব কিছুই খুব সুন্দর চলছিল হঠাৎ শুভ্রর জীবনে পরিবর্তন এল। ষষ্ঠ শ্রেণীতে শুভ্রর ক্লাসে একটা মেয়ে ভর্তি হল অপরাজিতা নাম ।
অপ্সরীর মত সুন্দর একটা মেয়ে। খুবই সুন্দর এবং মিশুক একটা মেয়ে তার সাথে শুভ্রর খুবই ভাল বন্ধুত্ব হল । তখন বয়সে ছোট তাই ভালোবাসার মানে কি তা শুভ্র বুঝে নি। আস্তে আস্তে তাকে শুভ্রর ভাল লেগে গেল । এভাবে ২ বছর চলতে থাকল তাদের বন্ধুত্ব আরও বেড়ে গেল । তারা একসাথে সব জায়গায় পরতে যেতো । এটা নিয়ে তাদের বন্ধুরা তাদের অনেক খেপাত । এক সময়ে যেয়ে শুভ্র বুঝতে পারে সে অপরাজিতা কে ভালবেসে ফেলেছে । তখন শুভ্রর খুব ভয় হল সে এটা কিভাবে অপরাজিতা কে কিভাবে বলবে । বললে যদি সে রাগ করে তাদের বন্ধুত্ব যদি ভেঙ্গে যায় ? শুভ্র তখন এই বিষয় নিয়ে তার এক বন্ধুর সাথে আলোচনা করল । সেই বন্ধুটি তাকে অভয় দিয়ে অপরাজিতা কে সব খুলে বলতে বলল । কিন্তু এরি মধ্যে শুভ্রর চোখে সমস্যা দেখা দিল তাই কথা গুলো আর বলা হল না । তারপর শুভ্রর চোখের চিকিৎসা শেষে যখন সব বন্ধুরা দেখতে এল তার অপরাজিতাও ছিল । অনেক দিন পর অপরাজিতা কে দেখে শুভ্রর মন্তা অনেক খুসি হয়ে উঠলো । তারপর আস্তে আস্তে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে এল শুভ্র আর অপরাজিতা আবার আগের মত হয়ে গেল । তখন শুভ্র সিদ্ধান্ত নিল যে অপরাজিতা কে সব খুলে বলবে । তারপর একদিন সময় বুঝে শুভ্র তার বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে। তারপর এল সেই দিন দিনটি, সেদিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০০২ সাল বৃহস্পতিবার । তখন টিফিন এর বিরতি চলছিল , অপরাজিতা কে ডেকে শুভ্র দুরু দুরু বুকে ভয় নিয়ে সব বলে ফেলল । অপরাজিতা তখন বড় বড় চোখ করে অবাক দৃষ্টিতে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে । তখন শুভ্রর সাথে তার দুইটা বন্ধু আর অপরাজিতার সাথে তার দুইটা বান্ধবী ছিল । সেই মুহূর্তে অপরাজিতা শুভ্রকে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেল । শুভ্র তখন দুঃখে ভেঙ্গে পরল সে কি তার সবচেয়ে ভাল কাছের বন্ধুটিকে হারিয়ে ফেলল এই ভয়ে । তারপর দুইদিন শুভ্রর সাথে অপরাজিতা কোন কথা বলে নি । শুভ্র এই দুইদিন পাগলের মত হয়ে ছিল । তারপর এল সেই দিন রবিবার স্কুল ছুটির পর অপরাজিতা তার বান্ধবি কে দিয়ে শুভ্রকে ডেকে পাঠায় । শুভ্রর বুকটা তখন ভয়ে ছমকে উঠে না জানি অপরাজিতা তাকে কি বলে তাদের সম্পর্কটা কি এই ভাবেই শেষ হয়ে যাবে , শুভ্র দুরু দুরু বুকে মাথা নিছু করে অপরাজিতার সামনে গিয়ে দাড়ায় , তখন অপরাজিতা শুভ্রর সামনে শুভ্র মাথা সামান্য তুলে অপরাজিতার চোখের দিকে তাকায় , তখন অপরাজিতার চোখ লাল হয়ে ছিল , শুভ্র বুঝতে পারল অপরাজিতা অনেক কান্নাকাটি করেছে। অপরাজিতা তখন কোন কথা না বলে
শুভ্রকে জাপটে ধরল , ঘটনার আকস্মিকটায় শুভ্র চমকে উঠলেও সে মুহূর্তের মধ্যে সামলে নিল । সেও অপরাজিতা কে জড়িয়ে ধরল । কিছুতা ছিনেমার মত মনে হলেও এইটাই সত্যি । প্রায় দুই মিনিট তারা এই রকম ছিল। একটু পর অপরাজিতা বলল , “কেন তুমি আমাকে এত কষ্ট দেও” ? তখন শুভ্র বলার কোন ভাষা খুজে পেল না। সুধু বলল আর কখনও দেব না।
এই ভাবে ভালই চলছিল । মোটামুটি সবাই জেনে গিয়েছিল শুভ্র আর অপরাজিতার ব্যাপারে । এইভাবে চলতে চলতে S.S.C পরীক্ষা আসে গেল । শুভ্র ও অপরাজিতা দুই জনেই পরীক্ষা দিল । মাঝে শুভ্রর চোখের সমস্যা দেখা দেয় , তবে খুব বেশি কোন সমস্যা হয় নি । এইভাবেই দিন গুলো খুব সুন্দর ভাবে কেটে যাচ্ছিল । তখন ২০০৪ সাল মোবাইল নতুন আসে । খরচ অনেক বেশি , তারপরও তারা প্রতিদিন ২০ মিনিটের মত মোবাইল এ কথা বলত । এইভাবে রেজাল্ট এর দিন এল , শুভ্রর চোখে সমস্যা হউয়ার কারনে তার রেজাল্ট একটু খারাপ হয় । তবে অপরাজিতার রেজাল্ট ভালই হয়। তারা দুইজনেই একই কলেজে ভর্তি হয়।
দিন পার হয়ে যায় দিন গুলো স্বপ্নের মত পার হয়ে যাচ্ছিল । তারপর হঠাৎ করে একটা দিন শুভ্রর জীবনটাকে এলোমেলো করে দিল । দিনটি ছিল ২৯ জুন ২০০৫ বুধবার । কলেজ তখন ছুটি । অপরাজিতা অ্যাঁর তার পরিবার ঢাকায় বেরাতে যাচ্ছিল । সেখানে তাদের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পরে । খবরটা শুনে শুভ্রর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরে । তার পুরো পৃথিবীটাই উলটপালট হয়ে যায় ।
তাকে সামলানোর মত কেউ ছিল না । শুভ্র পুরা পাল্টে যায়, একাকীত্ব শুভ্রকে গ্রাস করে । এই পৃথিবীর কিছুই তার ভাল লাগে না । তখন শুভ্রর বন্ধু শুভ্রকে বোঝায় , যে তাকে নতুন করে সব শুরু করতে হবে । আস্তে আস্তে শুভ্র তার সেই বন্ধুর সাহায্যে সব কিছু সামলে উঠতে শুরু করে । এইভাবে H.S.C পরীক্ষা এসে গেল শুভ্র অপরাজিতার সৃতি সাথে নিয়ে পরীক্ষা দিল ।
দিন কেটে যায় । আস্তে সময় পার হয়ে গেলেও শুভ্র কিন্তু তার অপরাজিতার কথা ভুলে নি । তখনও মনের অগোচরে অপরাজিতার কথা চিন্তা করে শুভ্র কাদে । এইভাবে H.S.C পরীক্ষার রেজাল্ট দিল ভালই হল । তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকল শুভ্র আর তার বন্ধু । অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হল । কয়েকটি জায়গায় তারা পরীক্ষা দিল ।
তার মধ্যে একটিতে শুভ্র ও তার বন্ধু সুযোগ পেয়ে গেল। অবশেষে ভর্তি হওয়ার পালা । কিন্তু এরি মধ্যে শুভ্রর জীবনে দ্বিতীয়বার চরম একটি আঘাত এল যে বন্ধুটি তাকে এতদিন আগলে রেখেছিল সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরল এবং তার দুই দিনের মাথায় সে মারা গেল । শুভ্রর এবার কিছুই বলার রইল না । সে খেয়াল করল আজ ২৯ জুন কাকতালীয় ভাবে এই দিনও অপরাজিতা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল না ফেরার দেশে আর আজ তার শেষ সম্বল তার একমাত্র প্রিয় বন্ধু তাকে ছেড়ে চলে গেল । এইবার শুভ্রকে সামলানোর কেউ ছিল না । তারপরও শুভ্র নিজেকে সামলে নিলো । কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে ততোক্ষণে অনেক শুভ্র তার আর তার বন্ধুর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে নি । সেই থেকে শুভ্র নিজেকে নিজেই সামলে চলেছে , কিন্তু মাঝে মাঝে শুভ্র নিজেকে প্রশ্ন করে শুভ্র কি নিজেকে সামলাতে পারছে ? সে কি প্রতিনিয়ত নিজের সাথে নিজে অভিনয় করছে না ?
শুভ্র জানে দুঃখ কি জিনিস ! তাই সে কখনও চায় না অন্য কেউ দুঃখ পাক
তাই সে প্রতিনিয়ত সবাইকে খুসি রাখার চেষ্টা করসে কতটুকু সফল সে জানে না । কিন্তু শুভ্র নিজে খুশী নয় । অন্যকে খুশি রাখতে শুভ্রকে অভিনয় করতে হয়। তারপরও শুভ্র চায় সবাই সুখি থাকুক। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি শুভ্রকে বাধ্য করছে এই অভিনয় চালিয়ে যেতে । এখন শুভ্র খুজে বেরায় অপরাজিতার মত কাওকে যে তার মনের কথা বুঝবে । কিন্তু সেটা পাওয়া সহজ নয়।শুভ্র খুজে এমন একজন বন্ধুকে যে তার কষ্টের সময় তাকে আগলে রাখবে। শুভ্র এখনও রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে অপরাজিতা কে সপ্নে দেখে । হয়ত শুভ্রর বাকি জীবনটা এইভাবে কেটে যাবে একাকীত্ব ময় হয়ে । এইভাবে অভিনয় করতে করতে হয়ত শুভ্রও একদিন চলে যাবে না ফেরার দেশে তার অপরাজিতার কাছে। অনেকে বলে সময়ের সাথে সব দাগ শুঁখিয়ে যায় কিন্তু এই দাগ তোঁ শুঁখানোর মত নয় ।










Click on stars for reating this article.
  • 0.5
  • 1.0
  • 1.5
  • 2.0
  • 2.5
  • 3.0
  • 3.5
  • 4.0
  • 4.5
  • 5.0
not rated
edit